মা যেন ঘুমের ঘাটতি দূর করার জন্য যে ৭ টি কাজ করবেন

PrintableColorPal
0



সন্তান জন্মের পর মায়েদের জীবন বদলে যায় রাতারাতি। যতই সুন্দর হোক মাতৃত্বের অনুভূতি, এর সঙ্গে আসে ঘুমহীন রাত, ক্লান্তি এবং চরম অবসাদ। নবজাতকের ঘন ঘন ঘুম ও খাওয়ার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অনেক মা দিনের পর দিন পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হন। এর প্রভাব পড়ে শরীর, মন এবং পারিবারিক জীবনের ওপর।

ঘুমের ঘাটতি শুধু শারীরিক দুর্বলতা নয়, বরং মানসিক চাপ, মেজাজ খারাপ হওয়া, ভুলে যাওয়া, এমনকি মাতৃত্ব উপভোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই একজন মা হিসেবে নিজের ঘুমের দিকে খেয়াল রাখা মোটেই বিলাসিতা নয়—বরং প্রয়োজনীয়তা।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, ঘুমের ঘাটতি দূর করতে সদ্য মা হওয়া নারীরা কোন ৭টি কাজ করতে পারেন।

১. যখনই বাচ্চা ঘুমাবে, মা-ও ঘুমান



অনেক মা শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে অন্য কাজ করতে শুরু করেন, যেমন কাপড় ধোয়া, বাসন মাজা, রান্না ইত্যাদি। কিন্তু এই অভ্যাসই ঘুমের প্রধান বাধা।

মায়ের করণীয়:

  • শিশু যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখনই নিজেও ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন—even যদি সেটা দিনের বেলা হয়।

  • এটা সত্যি যে এই ঘুম দীর্ঘ হবে না, কিন্তু কয়েকবার এমন ছোট ছোট ঘুম মিলিয়ে মোট ঘুমের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে।

  • কাজ পরে করলেও চলবে, কিন্তু ঘুমের ঘাটতি একবার হলে শরীর ও মন দুটোই দুর্বল হয়ে পড়ে।

২. পরিবারের সাহায্য গ্রহণ করুন



সব কিছু একা করতে গিয়ে আপনি একা ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। ঘরের কাজ, রান্না, বাজার, এমনকি মাঝে মাঝে শিশুর দেখাশোনাও পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়া জরুরি।

মায়ের করণীয়:

  • স্বামী বা অন্য সদস্যদের স্পষ্টভাবে জানান আপনি ঘুমাতে চান বা বিশ্রাম নিতে চান।

  • একবার রাতে স্বামী বা মা-বাবা যদি শিশুর ডায়াপার বদলানো বা ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব নেয়, আপনি একটু নিরবচ্ছিন্ন ঘুম পেতে পারেন।

  • সন্তান লালনের দায়িত্ব শুধু মায়ের নয়—পরিবারের সবার।

৩. রাতের রুটিন তৈরি করুন

শিশুদেরও অভ্যাস গড়ে ওঠে। রাতে ঘুমানোর আগে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করলে শিশুরাও বুঝতে শেখে যে এখন ঘুমের সময়।

মায়ের করণীয়:

  • প্রতিরাতেই একই সময়ে শিশুকে দুধ খাওয়ানো, হালকা গান শোনানো, বা গোসল করানো শুরু করুন।

  • ঘরের আলো হালকা করে দিন, শব্দ কমিয়ে দিন।

  • সময়মতো ঘুমের পরিবেশ তৈরি করলে শিশু ধীরে ধীরে রাতে একটানা ঘুমাতে শিখবে। এতে মাও ঘুমাতে পারবেন।

৪. নিজের শরীর-মন রিল্যাক্স করুন



শুধু শোয়ার মানেই ঘুম আসে না। দিনের ক্লান্তি, উদ্বেগ ও টেনশন ঘুমকে দূরে রাখে। তাই ঘুমানোর আগে শরীর ও মন শান্ত করার কিছু অভ্যাস তৈরি করুন।

মায়ের করণীয়:

  • ঘুমানোর আগে গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখা, হালকা যোগ ব্যায়াম বা গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন।

  • মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে।

  • চা-কফির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর।

৫. ঘুমের পরিবেশ ঠিক রাখা

একটি শান্ত, অন্ধকার, এবং আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ ঘুমের মান বাড়িয়ে দেয়।

মায়ের করণীয়:

  • ঘরে প্রয়োজনমতো আলো-আঁধারির ভারসাম্য রাখুন।

  • বিছানার চাদর, বালিশ আরামদায়ক রাখুন।

  • বাচ্চার ক্র্যাডল বা কো-স্লিপার এমনভাবে রাখুন যাতে আপনি ঘন ঘন উঠতে না হয়, এবং ঘুমে ব্যাঘাত কম হয়।

৬. নিজের ঘুমকে প্রাধান্য দিন

অনেক মা মনে করেন, ঘুমানো মানে সময় নষ্ট। আসলে নয়। ঘুম না হলে আপনার শরীর আর মন—কোনোটাই কাজ করবে না।

মায়ের করণীয়:

  • নিজেকে বলুন: “আমি ঘুমাইলে আমার সন্তানও ভালো থাকবে।”

  • পরিবারের সবার থেকে বলুন: “আমার বিশ্রামের দরকার আছে, এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।”

  • মায়ের ঘুম মানেই ভালো দুধ উৎপাদন, ভালো মেজাজ, এবং ভালো শিশুর যত্ন।

৭. অতিরিক্ত চাপ কমান ও সহায়তা নিন

যদি মনে হয় ঘুমের অভাবে আপনি হতাশা বা উদ্বেগে ভুগছেন, তাহলে শুধু বিশ্রাম নয়—পেশাদার সাহায্য নেওয়া দরকার।

মায়ের করণীয়:

  • কোনো মানসিক চাপ বা ঘুমজনিত সমস্যা হলে কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলুন।

  • শিশু যত্নে সমস্যা হলে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন—হতে পারে সেটা কোনো নার্স, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মী বা পেডিয়াট্রিশিয়ান।

  • নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন—কারণ আপনি ভালো থাকলে তবেই আপনার সন্তান ভালো থাকবে।

উপসংহার

সন্তান লালনপালনের শুরুটা চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে ঘুমের অভাবে। তবে কিছু সচেতনতা, পরিকল্পনা এবং সহায়তার মাধ্যমে মায়েরা ধীরে ধীরে ঘুমের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারেন। মনে রাখবেন, ঘুম কোনো বিলাসিতা নয়—এটা মায়ের অধিকার এবং প্রয়োজন।

একজন সুস্থ, প্রশান্ত ও পরিপূর্ণ ঘুমে বিশ্রাম পাওয়া মা মানেই একটি সুখী, সুস্থ পরিবার। তাই নিজের ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন। প্রতিটি ঘুমের মুহূর্তই আপনাকে আরও শক্তিশালী এবং আরও ভালো মা হতে সাহায্য করবে।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)